লোডিং... Loading.....................!

img
হোম
ব্লগ
সর্বাধিক পঠিত
সর্বাধিক আলোচিত
অনলাইনে আছেন
লগইন
রেজিস্ট্রেশন
মেনু বন্ধ করুন

মেনু বন্ধ করুন
img

সুমন

কলম বিক্রম তারিখঃ ডিসেম্বর ৭, ২০২০ (সোমবার), ১৫:৫২
  • ৫০
  • ০
  • ০
  • ০

ভারতের চলচ্চিত্রে মুসলিম বিদ্বেষ



স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পর প্রথম তিন দশক ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে জাতি গড়ার কাজে সমরূপকরণ ও প্রগতিশীল উপাদান বিবেচনা করা হতো। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক থেকে ভারতীয় অর্থনীতিকে উদারিকরণ করা ও একইসাথে হিন্দুত্ববাদের উত্থানের পর চলচ্চিত্র শিল্প তার পুরনো মূল্যবোধ থেকে সরে আসতে থাকে। স্থূল বাণিজ্যিকারণ ছাড়াও উগ্র জাতীয়তাবাদ, জাতিভিত্তিক সাংস্কৃতিকবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্য দিয়ে এগুতে থাকে।

জাতিগত রাজনীতি এখন তামিল চলচ্চিত্র শিল্পে প্রবেশ করেছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট কিংবদন্তি মুত্তাইয়া মুরালিধরনের বায়োপিক ৮০০ তৈরীকে ঘিরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক বিতর্কে তা দেখা যাচ্ছে।দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পে এটি একটি নতুন মাত্রা। আর গত ২০ বছর ধরে উত্তর ভারতের চলচ্চিত্র বর্ণগত ওয়ান-আপম্যানশিপ, মুসলিমবিরোধী ও পাকিস্তানবিরোধী ভাবাবেগ প্রকাশ করছে। এর প্রধান কারণ ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান।

চলচ্চিত্র এখন আর নতুন নতুন আইডিয়ার অবাধ প্রকাশ বা সহিষ্ণুতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার-সংবলিত সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম না হয়ে দলীয় রাজনীতি প্রচারের হাতিয়ার বিবেচিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনীতে অনানুষ্ঠানিক জাতিগত-রাজনৈতিক সেন্সর হস্তক্ষেপ করছে।

মুরালির বায়োপিকের কথা
মুরালি হলেন বিশ্বখ্যাত শ্রীলঙ্কান তামিল বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরন।শ্রীলঙ্কার তামিলরা তামিল হয়েও তাদেরকে দমন করার জন্য সামরিক বাহিনীর অভিযানের সময় (এলটিটিইপন্থী তামিলরা একে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করে।) তাদের পক্ষ গ্রহণ না করার জন্য মুরালিকে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল করে থাকে। তার কিছু বক্তব্য এই ধারণা দেয় যে তিনি মনে করেন যে তামিলদের কোনো আন্দোলন করার যুক্তি নেই।মুরালির সমালোচকেরা বলেন, ৮০০ নামের চলচ্চিত্রটি কেবল তার ক্রিকেটিং ক্যারিয়ার, তার পেশাগত বিচার-বিবেচনা, দুঃখ-কষ্টের কাহিনী নিয়েই হওয়া উচিত নয়, বরং সিংহলি-বৌদ্ধবাদের প্রাধান্যপূর্ণ শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বৃহত্তম সংগ্রাম নিয়ে হওয়া দরকার। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে যুদ্ধের শেষে গণহত্যা এবং যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে মুরালির অস্পর্শকাতরতা ও সিংহলিপন্থী মন্তব্যও থাকা দরকার।
চলচ্চিত্রটির বিরুদ্ধে ভারতের তামিল নাড়ু ও প্রবাসী তামিলরা বেশ সোচ্চার হয়ে ওঠেছে। এর ফলে মুরালি চলচ্চিত্রের নায়ক বিজয় সেথুপারাথিকে সরে যেতে বলেছেন। সেথুপারাথি সরে গেছেন। এখন চলচ্চিত্রটির ভাগ্য পলকা সুতায় ঝুলছে।

বৃহত্তর অস্থিরতা
৮০০ নিয়ে যে তীব্র সমালোচনা চলছে তা ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের অস্থিরতাই প্রকাশ করছে। বিপুল দর্শকপ্রিয়তা ও মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের সক্ষমতার কারণে বার্ষিক ২.৫ বিলিয়ন ডলারের শিল্পটি রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো অস্বস্তিকর চিন্তাধারা, আইডিয়া ও মতামত দমনের জন্য চলচ্চিত্র আর চলচ্চিত্র নির্মাতাদের টার্গেট করে থাকে। এসব শক্তি অনেক সময়ই চলচ্চিত্রের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে। ফলে চলচ্চিত্র নির্মাতা যেভাবে ছবিটি নির্মাণ করতে চান, যাকে যেভাবে চিত্রিত করতে চান, তা পারেন না। এমনকি বিষয়টি বিচারের ভার দর্শকদের হাতেও দিতে পারেন না। দর্শকরাও যেভাবে ও যে মুভিটি দেখতে চান, তা পারেন না। রাষ্ট্রযন্ত্র ও বিচার বিভাগও হস্তক্ষেপ করে। দাঙ্গাবাজ জনতাও ভূমিকা পালন করে।

বলিউডের অস্থিরতা
বিশাল ল্যাঙ্গাসা ২০০৬ সাল থেকে বলিউডে এসব হস্তক্ষেপের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগের পরিপন্থী হওয়ায় কিছু চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৭ সালে গুজরাত রাজ্য পারজানিয়াকে নিষিদ্ধ করে। কারণ বিজেপিশাসিত গুজরাতে ২০০২ সালের কুখ্যাত মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সময় নিখোঁজ হওয়া একটি বালক নিয়ে ছিল এর কাহিনী। ২০০৫ সালেঅনুরাগ কশ্যপের ব্ল্যাক ফ্রাইডে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এতে নামগুলো প্রকাশ করায়। এর কাহিনী ছিল মুম্বাইয়ের সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণের।

যোধা-আকবর উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল যোধা চরিত্রটি থাকার জন্য। রাজপুত বা ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় থেকে আপত্তি ওঠেছিল হিন্দু রাজপুত রমণীর মুসলিম সম্রাট আকবরের স্ত্রী হওয়ায়। আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে তা নিষিদ্ধ ছিল। পদ্মাবতে মুসলিম সুলতান আলাউদ্দিন খিলজিকে হিন্দু রাজপত প্রিন্সেস পদ্মাবতের জন্য পাগল দেখানোর কারণে নিষিদ্ধ হওয়ার মুখে ছিল।

অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম তার গ্রন্থ ইন্ডিয়ান মুসলিম(স) আফটার লিবারেশনে হিন্দু সিনেমায় অব্যাহতভাবে মুসলিমদেরকে চরিত্রহানির কথা উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র কিভাবে ‘মুসলিম আদার’ সৃষ্টি করছে, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অধ্যাপক মাইদুল ভারতীয় মুসলিমদের নিয়ে মিথ, সংস্কার, গঁথবাধা ধারণা সৃষ্টির পেছনে চলচ্চিত্রের ভূমিকাও তুলে ধরেন।
প্রণব কোহলি ও প্রণত ধাওয়ান ২০২০ সালের ২৭ মার্চ ফ্রন্টলাইনের এক প্রতিবেদনে বলেছেন, বর্তমান উত্তর ভারতে বলিউড চলচ্চিত্রগুলো মুসলিম চরিত্রগুলোকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তির ওপর হিন্দু ডানপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এসব সিনেমায় মুসলিমদেরকে দানব ও নৃশংসভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।

তারা বলেন, ১৯৯০-এর দশক থেকে হিন্দি চলচ্চিত্রগুলোতে মুসলিমদের যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তাকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে : ১. জাতির শত্রু হিসেবে ‘মুসলিম আদার’। ২. কল্পিত হিন্দু জাতিতে মুসলিমদের নিম্নতর মর্যাদায় রাখা। ৩. দেশের মধ্যে মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসের উৎস হিসেবে দেখানো। এবং ৪. মুসলিম, সন্ত্রাসী ও পাকিস্তানকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
তারা বলেন, বলিউডে পাকিস্তানবিরোধী মুভিগুলো তৈরী হচ্ছে দশর্কদের খুশি করার জন্য। পাকিস্তানকে ভিলেন বানিয়ে তাদেরকে হারিয়ে দর্শকদের তৃপ্তি দেয়া এর লক্ষ্য।
তারা বলেন, ৩০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করা ১২টি বলিউডি মুখির মধ্যে ১০টিতেই (ব্যতিক্রম কেবল সুলতান ও থ্রি ইডিয়টস) প্রধান চরিত্রে কোনো মুসলিম নেই। মুসলিমদেরকে কেবল পাকিস্তানি হিসেবে দেখানো হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে, কেবল হিন্দুরাই ভারতের নাগরিক হতে পারে।

হিন্দুত্ববাদের নিয়ন্ত্রণ
নিউ ইয়র্ক টাইমসে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রীতিশ নন্দি বিজেপির হিন্দুত্বাদী নীতির ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রচারের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বলিউডের অনেক অভিনেতা ও নির্মাতা হিন্দু জাতীয়তাবাদী এস্টাবলিশমেন্টের সাথে অবস্থান করে স্বস্তি পেয়ে থাকে।

তরুণ হলিউড স্টার সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুকে ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা আশা করছে এই আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে ব্যবহার করে তারা ভিন্ন ও উদার মতালম্বীদের চিহ্নিত করে দেবে। তারা বলিউডকে তাদের পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে চায়।
অক্টোবরে বিহার রাজ্যের নির্বাচন হবে। এখান থেকে ভারতীয় পার্লামেন্টে ৪০ জন প্রতিনিধি পাঠানো হয়।প্রধানমন্ত্রী মোদির বিজেপি আশা করছে, বিহারে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবে। তারা এর মাধ্যমে ভূমিপুত্র সুশান্তের হত্যার ন্যায়বিচার করার কথাও প্রচার করছে।

তিনি বলেন, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যই সুশান্ত খুন হয়েছেন বলে প্রচার করছে। মুম্বাই পুলিশের মতে, তাদের স্বার্থে বলিউডকে মাদক পাচারকারী হিসেবে কলঙ্কিত করতে ৮০ হাজার ভুয়া সামজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

ধন্যবাদ

x

প্রত্যুত্তর দিন

লিঙ্ক ইমো ছবি ছবি ভিডিও
ছবি আপলোড

    A PHP Error was encountered

    Severity: Notice

    Message: Undefined variable: smiley_table2

    Filename: views/detail.php

    Line Number: 598

    কপিরাইট 2014.
    সকল স্বত্ব সংরক্ষিত