এরা রুপকথার রাক্ষসের গল্প শুনে বেড়ে ওঠা তরুণ নয়, এরা বঙ্গবন্ধুর সেই রক্তে আগুন লাগা মহাকাব্যিক বিদ্রোহের ভাষণ শুনতে শুনতে বড় হয়েছে!
বুড়িয়ে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থার উপর আমার এতটুকু আস্থা নেই। আমার সবটুকু আস্থা, সমস্ত বিশ্বাস এই তারুণ্যের উপর। এই অকুতোভয় তারুণ্যের উপর ভর করে আমরা শোষকের শৃঙ্খল থেকে বায়ান্নে ভাষা পেয়েছি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির যে মহাকাব্য রচিত হয়েছে তার প্রতিটি পঁক্তি জুড়ে আছে তারুণ্যের জয়োল্লাস। তারপর দুই দশকের ব্যবধানে শোষক গোষ্ঠী যখন তারুণ্যের দুর্বার শক্তিকে ভুলতে বসেছিলো, নব্বইয়ে তখন মিলনদের রক্ত আরেকবার শোষকের বুক প্রকম্পিত করেছিলো। এরপর প্রায় তিন দশক অতিবাহিত হওয়ার পথে। একচ্ছত্র ক্ষমতা যদি বিশ্বাসের উপর শোষণের ভুত হয়ে ভর করে, তবে একবার ইতিহাসের ধুলি জমা মলাট উল্টিয়ে দেখার অনুরোধ থাকবে। কেউ টিকতে পারেনি। তারুণ্য যেমন আপনার সিংহাসন সুসংহত করতে পারে, তেমনি ক্ষমতার পোক্ত সমনদ টলিয়ে দিতে পারে কেবল এক ফুঁৎকারে! কিন্তু তারুণ্যের এই ঐশ্বরিক ক্ষমতার পরীক্ষা নিতে যাওয়ার ভুল করবেন না যেন, তাহলে সর্বস্ব খুইয়ে এর মাশুল গুণতে হবে!
ইতিহাসের সব থেকে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। পলাশিতে অস্ত যাওয়া মুক্তির সূর্য্য একাত্তরে উদিত হবার পথের সেই রোমাঞ্চকর সফরের প্রতিটি পরতে পরতে এই তারুণ্য তার অজেয় শক্তির সাক্ষর রেখেছে। যদি বেরাকপুরের একজন তরুন তুর্কি মঙ্গল পান্ডে গোটা বৃটিশ বেনিয়াদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে, যদি মাস্টারদা, সূর্য্য সেন, প্রীতিলতারা অর্ধ পৃথিবী করতলগত শোষকগোষ্ঠীর সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা রুখে দিতে পারে, তবে এই চাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশের গোটা কতক নির্লজ্জ জণপ্রতিনিধি তো তারুণ্যের কাছে নিছক নস্যি। ভুলে যাওয়ার অবকাস নেই, এই স্কুল ব্যাগ কাধে রাস্তায় নামা ছাত্রদের শিরায় শিরায় প্রীতিলতার রক্ত প্রবাহমান। এরা রুপকথার রাক্ষসের গল্প শুনে বেড়ে ওঠা তরুণ নয়, এরা বঙ্গবন্ধুর সেই রক্তে আগুন লাগা মহাকাব্যিক বিদ্রোহের ভাষণ শুনতে শুনতে বড় হয়েছে! এদের অনু পরিমাণ রক্তের মুল্য আপনাকে চড়া দামে চুকাতে হবে!