রিমান্ড বা জিজ্ঞাসাবাদ ভয়ানক কিছু নয়, অন্তত ভয়ের কিছু হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এটা বাংলাদেশ। এখানের বিষয়গুলো অন্যরকম। এখানে সভ্য দেশে যা হয় তা দিয়ে বিচার করতে নেই। যেমন এদেশে সোনার মেডেলে মরিচা পড়ে। আপনি পাবেন এমন কোন দেশ যেখানে সোনার মেডেলে মরিচা পড়ে? পাবেন না।
তেমনি বাংলাদেশে জিজ্ঞাসাবাদের নামে যা হয় তা অবর্ণনীয়। তাইতো রাশেদের মা, বোন এবং স্ত্রী যেভাবে আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন তাতে মনে হয়েছে রাশেদের মৃত্যুদণ্ডই বুঝি হয়েছে। অন্য দেশের মানুষের কাছে তা অবাক লাগতে পারে কিন্তু বাংলাদেশীরা জানে রিমান্ড মানে মৃত্যুদন্ডের চাইতে কম কিছু নয়। পাঁচদিন পর রাশেদ যদি কোনরকম হাঁটতে পারে তবে তা হবে তার জন্য বিরাট পাওনা। এদেশে বহু মানুষ রিমান্ড শেষে বেঁচেই ফিরতে পারেনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাড়ি গিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী হুমকি দিয়েছেন বলে তাঁর মা সালেহা বেগম অভিযোগ করেছেন। সোমবার আদালতে রাশেদ খানের রিমান্ডের শুনানির পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। আদালত রাশেদ খানকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। রিমান্ড শুনানির সময় বিচারক আসামি রাশেদ খানকে বলেন, ‘নেতা হতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে।’
আদালতে দেওয়া পুলিশের আবেদনে বলা হয়, গত ২৭ জুন রাশেদ খান তাঁর নিজের ফেসবুক মুহাম্মাদ রাশেদ খান থেকে ফেসবুক গ্রুপ ‘কোটা সংস্কার চাই (সকল ধরনের চাকরির জন্য)’-তে সন্ধ্যা ৮টা ৮ মিনিটে লাইভে এসে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
আদালতে গতকাল রাশেদের পক্ষে তাঁর আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। এ সময় রাশেদ খান নিজেই আদালতকে বলেন, ‘এ আন্দোলন আমার একার নয়। এটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন। আন্দোলনে নামার পর সরকারের পক্ষ থেকে তিনবার আমাদের সঙ্গে বসা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৪ মে আলোচনা হয়েছে।’
একপর্যায়ে বিচারক বলেন, ‘আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে। নেতা হতে হলে তো ধৈর্য ধরতে হবে।’
আইনজীবী জাইদুর রহমান ও মো. নুরুজ্জামান শুনানিতে বলেন, ‘আসামি কোনো অন্যায় করেননি। মামলায় মানহানির অভিযোগের বিষয়ে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।’ বিচারক বলেন, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার মানে তদন্ত কর্মকর্তাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। এরপর তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডের আদেশের পর রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম, বোন সোনিয়া ও রূপালি এবং স্ত্রী রাবেয়া আলো আদালতকক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন। সালেহা বেগম বলেন, ‘আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার সেই ছেলে এখন জেলে। ও ছাড়া পেলে বাড়ি নিয়ে যাব। আমার আর চাকরির দরকার নেই।’
আমাদের মা'দের চাওয়াগুলো খুব সরল। আমার ছেলের চাকরী দরকার নেই, কুত্তা সামলাও। কিন্তু রাশেদের সংগ্রাম তার নিজের জন্য না। রাশেদের সংগ্রাম বাংলাদেশের জন্য। তাইতো আমি বলি, রাশেদ নয়, রিমান্ডে আছে বাংলাদেশ। রাশেদ হয়তো পাঁচদিনের রিমান্ডে। কিন্তু বাংলাদেশ যে দশ বছরের রিমান্ডে আছে সে কথা কে ভাববে? এদেশে বিনা বিচারে মানুষ খুন করা হাতের মোয়া। আমরা এখন আর সেই হিসাব রাখি না কতজন ক্রসফায়ারে মরে গিয়েছে। প্রতিদিনই মরছে। কে কার খবর রাখে?
সড়ক দূর্ঘটনার নাম করে এবার ঈদে প্রায় ৫০০ মানুষ মরে গিয়েছে। কে কার খবর রেখেছে? রাশেদের তো আইনজীবী আছে। বাংলাদেশের আইনজীবী কে হবে? কে তাকে রিমান্ড থেকে উদ্ধার করবে?