গুম, খুন, অপহরণ, বন্ধুকযুদ্ধের মিছিলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকের সংখ্যা। এসব ঘটনা এখন আর কাউকে আলোড়িত করে না। একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের অধঃপতন কত নিচে নামলে পরে নবজাতককে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারে, তা সহজে অনুমেয়। আরবের ওই যুগে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত যেভাবে পুঁতে ফেলত, এ যুগেও কিছু নরপিশাচ ডাস্টবিন কিংবা ময়লার ভাগাড়ে নবজাতককে ফেলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না।
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সন্তান পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে আসছে। অথচ এখন মানুষ ভালোবাসার সন্তানকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করছে শুধু অবৈধ পাপাচার ঢাকতে। এই অপরাধ প্রবণতা সমাজ ও রাষ্ট্রে একদিনে গড়ে উঠেনি। মৌলবাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে যারা ধর্ম আর রাষ্ট্রকে আলাদা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের এখনই ভেবে দেখা দরকার, ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করবে নাকি নবজাতকের জীবন সুরক্ষা করবে। যে সমাজ ও রাষ্ট্রে অবাধ প্রেমাচার, পরকীয়া, যৌনাচারের সমস্ত রুট খোলা থাকে, সেখানে নবজাতকের জীবন ডাস্টবিনের স্তূপে কান্না করবে এটাই তো স্বাভাবিক!
প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে সমাজের রূপ। আগের দিনে যেসব ঘটনা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিত, এখন আর ওইসব ঘটনা নিয়ে কেউ ভাবেন না। ডাস্টবিনে নবজাতক কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়! একের পর এক নবজাতক উদ্ধার। কখনো জীবিত কখনো মৃত। পরিত্যক্ত স্থান, ডাস্টবিন, ড্রেন, ডোবা-নালা, ঝোপঝাড় সর্বত্রই জীবিত অথবা মৃত নবজাতক মিলছে।
সামাজিক অবক্ষয়, ইন্টারনেটের ভয়াবহতা, মাদকের আগ্রাসন, পর্নোগ্রাফি, অবাধ মেলামেশা মূলত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী। যে শিশুটি মায়ের নিরাপদ আঁচলে জড়িয়ে থাকার কথা, সে শিশুটি ডাস্টবিনের স্তূপে কাক-কুকুরের খাবারে পরিণত হচ্ছে। নারীরা মায়ের জাতি হওয়া সত্ত্বেও কেমন করে কলিজা ছেঁড়া ধনকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় তা বোধগম্য নয়! নবজাতক হত্যার মতোই দেশে এখন গর্ভপাত ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে।
দেশের আইন অনুযায়ী গর্ভপাত নিষিদ্ধ হলেও এর মাত্রা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। শুধু ২০১৪ সালেই দেশে প্রায় ১২ লাখ গর্ভপাত করানো হয়। গর্ভপাত ছাড়াও প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার এমআর হয়েছে। ২০১৪ সালেই সন্তান নষ্টের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬ লাখেরও বেশি। যেখানে দেশে মোট গর্ভের সংখ্যা সাড়ে ৪২ লাখ। (সূত্র : গুটম্যাকার,২০১৭) সামাজিক এই পাপাচারে অবিবাহিত মেয়েরা সবচেয়ে বেশি জড়িত। বয়ফ্রেন্ডের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে যখনই গর্ভবতী হচ্ছে, তখনই গোপন পাপ ঢাকতে ডাস্টবিন অথবা গর্ভপাতের পথ বেছে নিচ্ছে।
একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর তার বাঁচার অধিকারটুকু রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু ডাস্টবিন কিংবা পরিত্যক্ত স্থান থেকে নবজাতক উদ্ধার হচ্ছে তা কিন্তু নয়! মৃত নবজাতকও অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। গত মে মাসের প্রথম ১৫ দিনে মোট ২৮ জন নবজাতককে ডাস্টবিনে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৭ জন মৃত ও আটজন জীবিত ছিল। বাকি তিনজনের তথ্য পাওয়া যায়নি। (ইত্তেফাক, ১৯ মে ২০১৮) অবৈধ মেলামেশার ফলাফল নিষ্ঠুর ও বেদনাদায়ক হয়।
ক্ষণিকের উচ্ছ্বাস আর আবেগের মোহে যে অবৈধ শিশুর জন্ম হচ্ছে তার তো কোনো অপরাধ নেই! তাহলে কেন ডাস্টবিনের স্তূপে চাপা পড়ে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এসব নবজাতকের জীবন। সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটে তখন অন্যায়, জুলুম, পাপাচারের ছড়াছড়ি ধমকা হাওয়ার মতো সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাসীনেরা যে ফন্দি করে তার ছিটেফোটাও যদি ধর্মীয় অনুশাসন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করত তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের নবজাতক শিশুদের এভাবে ডাস্টবিনের ময়লার স্তূপে পড়ে থাকতে হতো না। এ ধরনের নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ নেবে এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা। ডাস্টবিন ময়লা ফেলার জায়গা। সেখান থেকে তো কান্নার আওয়াজ শোনার কথা নয়!