পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ অবশেষে ১৯৭১ সালের ঘটনাগুলোর জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীকেই দায়ী করেন। তিনি পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞের কথাও স্বীকার করেন। ঢাকা আলাদা হওয়ার পেছনে পাকিস্তানের ভূমিকাকেই মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।
পাকিস্তানের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমাদের কারণেই বাংলাদেশ আলাদা হয়েছিল। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে পাঞ্জাব হাউসে আইনজীবী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্তানে একের পর এক গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রসঙ্গ তুলে এ কথা বলেন তিনি।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পাওয়ার পরও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা ছাড়েনি। উল্টো নানা টালবাহানার পর বাঙালির ওপর চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ, যার পরিণতিতে স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নয় মাসের যুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ওই প্রসঙ্গ তুলে নওয়াজ বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী ছিলেন না। কিন্তু আমরা তাকে বিদ্রোহী করেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টিতে বাঙালির কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমরা ভালো আচরণ করিনি এবং আমাদের থেকে আলাদা করেছি।’
নওয়াজ শরিফ বলেন, বাংলাদেশের জন্ম প্রসঙ্গে বিচারপতি হামিদুর রহমান কমিশন একটি যথার্থ ও পরিচ্ছন্ন প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেখানে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ছিল। কিন্তু আমরা তা পড়েও দেখিনি। যদি তা পড়ে দেখতাম তাহলে আজ পাকিস্তানের এই পরিণতি হতো না।
নওয়াজের এই স্বীকারোক্তি আমাদের আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনয়নে ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘেও গনহত্যাকারী রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের নাম সংযুক্ত করা যাবে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। একইসাথে ব্লগ একাত্তর কর্তৃপক্ষও ভূমিকা রাখতে এই ব্যাপারে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ তিনবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কোনোবারই মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। সর্বশেষ গত বছর আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার পর ২৮ জুলাই পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে আদালত তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেন। এর আগেরবার সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি দেশান্তরিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন। নওয়াজের আগের পাকিস্তানের ১৭ প্রধানমন্ত্রীর ১৬ জনই তাদের পুরো মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। মঙ্গলবারের সমাবেশে আদালতের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নওয়াজ। তিনি বলেন, কোনো আদালত পাকিস্তানে স্বৈরশাসক বসানোর পথ তৈরি করতে পারে না।